মহাকাশের গভীরে এক অদ্ভুত ভোজের দৃশ্য ধরা পড়েছে, এবং এটি দেখার সৌভাগ্য হয়েছে শুধুমাত্র হাবল স্পেস টেলিস্কোপের। মাত্র ২৬০ আলোকবর্ষ দূরে — মহাজাগতিক দূরত্বের হিসেবে যা খুবই কাছাকাছি — একটি নিষ্প্রভ তারা, যাকে বলা হয় হোয়াইট ডোয়ার্ফ, একটি প্লুটোর মতো বস্তুকে গ্রাস করছে। এই বস্তুটি এসেছে সেই তারার নিজস্ব কুইপার বেল্ট থেকে, যা আমাদের সৌরজগতের চারপাশে থাকা বরফিলা ধ্বংসাবশেষের বলয়ের মতো একটি ঠান্ডা, বরফে ঢাকা অঞ্চল।
যখন এই প্লুটো-সদৃশ বস্তুটি হোয়াইট ডোয়ার্ফের খুব কাছে চলে আসে, তখন তারার শক্তিশালী মাধ্যাকর্ষণ এটিকে টুকরো টুকরো করে ফেলে। এরপর হোয়াইট ডোয়ার্ফ সেই টুকরোগুলো ধীরে ধীরে গ্রাস করতে শুরু করে। এই মহাজাগতিক ভোজের দৃশ্য শুধুমাত্র হাবল টেলিস্কোপই ধরতে পেরেছে, তার অনন্য অতিবেগুনি দৃষ্টিশক্তির কল্যাণে।
বিজ্ঞানীরা হাবলের সাহায্যে এই ধ্বংসপ্রাপ্ত বস্তুর রাসায়নিক গঠন বিশ্লেষণ করেছেন, যখন তার টুকরোগুলো হোয়াইট ডোয়ার্ফের উপর পড়ছিল। তারা অবাক হয়ে দেখেছেন যে এই বস্তুতে পানি এবং অন্যান্য বরফিলা উপাদান রয়েছে, যা ইঙ্গিত দেয় যে এটি এসেছে সেই তারার সিস্টেমের দূরবর্তী কুইপার বেল্টের মতো অঞ্চল থেকে। হাবলের অতিবেগুনি ক্ষমতা ছাড়া এই উপাদানগুলো, যা দৃশ্যমান আলোতে অদৃশ্য, কখনোই ধরা পড়ত না।
এই ঘটনা আমাদের মহাজাগতিক প্রতিবেশীদের সম্পর্কে আরও জানতে সাহায্য করছে। কুইপার বেল্টের মতো অঞ্চলগুলো মহাকাশের ইতিহাস বোঝার জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এগুলোতে প্রাচীন, অপরিবর্তিত উপাদান থাকে। হাবলের এই পর্যবেক্ষণ প্রমাণ করে যে আমাদের সৌরজগতের বাইরেও এমন বরফিলা বস্তু রয়েছে, যা অন্যান্য তারার সিস্টেমে জীবনের সম্ভাবনা সম্পর্কে নতুন প্রশ্ন তুলছে।
হাবল স্পেস টেলিস্কোপের এই অসাধারণ আবিষ্কার মহাকাশ গবেষণায় এক নতুন মাইলফলক। এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে মহাবিশ্ব কতটা বিস্ময়কর এবং অপ্রত্যাশিত ঘটনায় ভরা।
Tags
বিজ্ঞান আলাপ