ছবি: Csnva Pro
[স্বাস্থ্য সংবাদদাতা] চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাসে প্রতিটি যুগেই নতুন প্রযুক্তি চিকিৎসা সেবাকে এক ধাপ এগিয়ে নিয়েছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে নিউরোসার্জারির ক্ষেত্রে যে পরিবর্তন এসেছে, সেটিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন এক বৈপ্লবিক অগ্রগতি। দীর্ঘদিন ধরে মস্তিষ্কের অস্ত্রোপচারকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ প্রক্রিয়া বলা হতো। কারণ মানুষের মস্তিষ্কে কোটি কোটি স্নায়ু ও অসংখ্য সূক্ষ্ম রক্তনালী এমনভাবে জড়ানো যে সামান্যতম ভুলও প্রাণহানি কিংবা স্থায়ী অক্ষমতার কারণ হতে পারত।কিন্তু প্রযুক্তির অগ্রগতির ফলে এই ভয়াবহ ঝুঁকি অনেকটাই কমে এসেছে। থ্রিডি ইমেজিং ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) এখন চিকিৎসকদের জন্য হয়ে উঠেছে এক অমূল্য হাতিয়ার। উন্নত স্ক্যানিং প্রযুক্তির মাধ্যমে অস্ত্রোপচারের আগে রোগীর মস্তিষ্কের পূর্ণাঙ্গ থ্রিডি মডেল তৈরি করা যায়। এতে প্রতিটি স্নায়ু, রক্তনালী ও টিস্যুর অবস্থান মিলিমিটার-পর্যায়ে দেখা সম্ভব হয়। ফলে চিকিৎসকেরা অপারেশন থিয়েটারে প্রবেশের আগেই ভার্চুয়ালভাবে পুরো অস্ত্রোপচারের পরিকল্পনা ও অনুশীলন করতে পারেন।এআই প্রযুক্তি এই প্রক্রিয়াকে আরও একধাপ এগিয়ে দিয়েছে। রোগীর ডেটা বিশ্লেষণ করে এআই চিকিৎসকদের সুনির্দিষ্ট পরামর্শ দেয়, এমনকি লাইভ অস্ত্রোপচারের সময়ও রিয়েল-টাইম সতর্কতা জারি করে। কোথাও ভুল কাটার সম্ভাবনা তৈরি হলে বা অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ দেখা দিলে এআই সঙ্গে সঙ্গে সংকেত দেয়—যা চিকিৎসকদের সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে মুহূর্তের মধ্যেই সহায়তা করে।স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, আগে যেখানে জটিল মস্তিষ্ক অস্ত্রোপচারে মৃত্যুহার ২০ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত ছিল, সেখানে থ্রিডি ইমেজিং ও এআই প্রযুক্তি ব্যবহারের পর সেই হার নেমে এসেছে মাত্র ৫ থেকে ৭ শতাংশে। শুধু মৃত্যুহারই নয়, অস্ত্রোপচারের পর সুস্থ হয়ে ওঠার সম্ভাবনাও এখন বহুগুণে বেড়েছে। রোগীদের মধ্যে স্থায়ী পক্ষাঘাত বা কথা বলার অক্ষমতার মতো জটিলতা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে এসেছে।যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, জাপান ও সিঙ্গাপুরের মতো দেশগুলো ইতোমধ্যে এই প্রযুক্তি ব্যবহার শুরু করেছে। শুধু নিউরোসার্জারি নয়, মস্তিষ্কের টিউমার, অ্যানিউরিজম কিংবা স্ট্রোক-পরবর্তী চিকিৎসায়ও এর কার্যকারিতা প্রমাণিত হচ্ছে। গবেষকরা আশাবাদী যে ভবিষ্যতে এই প্রযুক্তি আরও উন্নত হবে এবং অস্ত্রোপচারের পাশাপাশি প্রাথমিক পর্যায়েই নানা মস্তিষ্কজনিত রোগ শনাক্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।আমাদের দেশেও এই প্রযুক্তি চালু হওয়ার প্রস্তুতি চলছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, একবার কার্যকরভাবে এটি প্রয়োগ করা গেলে রোগীদের বিদেশে গিয়ে ব্যয়বহুল অস্ত্রোপচার করানোর প্রবণতা কমে আসবে। দেশেই বিশ্বমানের চিকিৎসা পাওয়া সম্ভব হবে।সব মিলিয়ে বলা যায়, থ্রিডি ইমেজিং ও এআই শুধু অস্ত্রোপচারের ধারা বদলে দিচ্ছে না, বরং চিকিৎসাবিজ্ঞানে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করছে। ভবিষ্যতের দিনে হয়তো চিকিৎসকেরা মস্তিষ্কের ভেতরে শারীরিকভাবে প্রবেশ না করেও অনেক জটিল সমস্যার সমাধান করতে পারবেন। চিকিৎসাবিজ্ঞানের এই বিপ্লব মানবজাতিকে সুস্থ, নিরাপদ ও দীর্ঘায়ু জীবনের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
সূত্র: Physics
Tags
স্বাস্থ্য আলাপ