ছবি ক্রেডিট: নাসামহাকাশের গভীরে এক অদ্ভুত দৃশ্য ধরা পড়েছে নাসার হাবল টেলিস্কোপের চোখে। মাত্র ২৬০ আলোকবর্ষ দূরে একটি শ্বেত প্রলয়পৃষ্ঠার (white dwarf)—যা আসলে আমাদের সূর্যের মতো তারকার মৃত্যুর পরিণতি—ধীরে ধীরে গিলে ফেলছে এক Pluto-সদৃশ বরফময় গ্রহখণ্ড। যেন এক ক্ষুধার্ত মহাজাগতিক দৈত্য নিজের চারপাশ থেকে খাবার টেনে নিচ্ছে।
এই গ্রহখণ্ডটি এসেছে সেই সিস্টেমের বহুদূরের বরফময় অঞ্চলের একটি বেল্ট থেকে, যা আমাদের সৌরজগতের Kuiper Belt-এর মতো। এর গঠনে প্রচুর বরফ, জল, নাইট্রোজেন ও অন্যান্য উড়ে যাওয়া উপাদান (volatile) রয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এর ভেতর পানির বরফের পরিমাণই প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ। বিশেষভাবে অবাক করা বিষয় হলো, এতে প্রচুর নাইট্রোজেন পাওয়া গেছে—যা হাবলের পর্যবেক্ষণে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি পরিমাণে ধরা পড়েছে।
এই দৃশ্য সরাসরি চোখে দেখা সম্ভব হতো না। বিজ্ঞানীরা হাবলের Cosmic Origins Spectrograph ব্যবহার করে অতিবেগুনি (UV) আলোতে এই উপাদানগুলো শনাক্ত করেছেন। দৃশ্যমান আলোয় এসব খুঁজে পাওয়া যায় না, কারণ বরফ ও volatile উপাদানের সিগনেচার মূলত অতিবেগুনিতেই ধরা পড়ে।
এমন আবিষ্কার কেন গুরুত্বপূর্ণ? কারণ এটি আমাদের দেখাচ্ছে, তারকা মৃত্যুর পরও তার চারপাশে থাকা বরফময় বস্তুগুলো ধ্বংস হয় না, বরং অনেক সময় তারা আবার কেন্দ্রীয় তারকার দিকে টেনে নিয়ে আসে। এর মানে মহাবিশ্বে জল ও অন্যান্য জীবনঘনিষ্ঠ উপাদান শুধুই এক জায়গায় সীমাবদ্ধ নয়; বরং তারা নক্ষত্রের বিবর্তন প্রক্রিয়ার মধ্যেও টিকে থাকে এবং নতুন গ্রহে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা রাখে।
বিজ্ঞানীরা এটিকে আমাদের সৌরজগতের ভবিষ্যতের সঙ্গেও তুলনা করছেন। কয়েক বিলিয়ন বছর পর সূর্যও যখন শ্বেত প্রলয়পৃষ্ঠায় পরিণত হবে, তখন আমাদের Kuiper Belt-এর বরফময় বস্তুগুলোকেও হয়তো একইভাবে গ্রাস করবে। তাই এই পর্যবেক্ষণ শুধু দূরের এক তারকা নয়, আমাদের ভবিষ্যতেরও আভাস দেয়।
হাবলের এই আবিষ্কারকে আরও এগিয়ে নিতে গবেষকরা এখন জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ (JWST) ব্যবহার করার পরিকল্পনা করছেন, যাতে ইনফ্রারেড আলোতে আরও সূক্ষ্মভাবে পানি, কার্বনেটস বা অন্যান্য যৌগ খুঁজে বের করা যায়। এতে করে বোঝা যাবে, ঠিক কীভাবে মহাবিশ্বে জল ও জীবনের উপাদানসমূহ এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ভ্রমণ করে।
অতএব বলা যায়, এই দৃশ্য শুধু এক শ্বেত প্রলয়পৃষ্ঠার ভোজনের গল্প নয়, বরং এটি আমাদের শেখাচ্ছে জীবনের উপাদানগুলো কতটা স্থায়ী এবং মহাবিশ্বের অন্তিম নাটকেও কীভাবে তারা জেগে থাকে।
