Credit: The Hubble Heritage Team (AURA/STScI/NASA)
রাতের আকাশে চোখ মেললেই আমরা যে অসংখ্য তারা দেখে থাকি, তার মধ্যে কিছু কিছু আমাদের কল্পনার জগতে এক নতুন দিগন্ত খুলে দেয়। তাদের মধ্যে একটি হলো রিং নেবুলা, যা জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের জন্য এক রহস্যময় এবং রোমাঞ্চকর অধ্যায়। এটি শুধু একটি নেবুলা নয়, বরং একটি মৃতপ্রায় নক্ষত্রের গল্প, যা আমাদের মহাবিশ্বের সৌন্দর্য এবং রহস্যের এক উজ্জ্বল চিহ্ন।
১৭০০-এর দশকে যখন প্রথম টেলিস্কোপ দিয়ে রিং নেবুলা দেখা হয়, তখন এটি গোলাকার এবং অস্পষ্ট মনে হয়েছিল। উইলিয়াম হার্শেল এটিকে একটি দূরবর্তী গ্রহের মতো নামকরণ করেছিলেন। কিন্তু, প্রকৃতপক্ষে এটি একটি মৃতপ্রায় সূর্যের মতো নক্ষত্রের ধ্বংসাবশেষ, যা আমাদের মহাবিশ্বের এক রোমাঞ্চক গল্পের সূচনা করে। রিং নেবুলার বাইরের স্তরগুলো যখন নক্ষত্রটি তার জীবনযাত্রার শেষ পর্যায়ে চলে আসে, তখন এটি তার বাইরের গ্যাসীয় স্তরগুলো মহাকাশে ছুঁড়ে দেয়। আপনি কি জানেন, এই গ্যাসগুলো ঘণ্টায় প্রায় ৪০,০০০ কিলোমিটার গতিতে ছড়িয়ে পড়ছে? মহাকাশের বিশালতার মধ্যে এটি খুবই ধীর, কিন্তু এই গতির মধ্যে রয়েছে এক নতুন জীবন সৃষ্টির সম্ভাবনা।
রিং নেবুলার উজ্জ্বল রঙগুলো যেন মহাকাশের এক শিল্পকর্ম। লাল, সবুজ এবং নীল—প্রতিটি রঙই অসংখ্য গ্যাসের পরমাণুর থেকে উদ্ভূত হয়েছে। লাল গ্যাস হলো নাইট্রোজেন এবং হাইড্রোজেনের, সবুজ অক্সিজেনের এবং নীল হিলিয়ামের। এই রঙগুলো আমাদের জানান দেয় যে, মহাবিশ্বের প্রতিটি উপাদানই তার নিজস্ব গল্প নিয়ে এসেছে।
নেবুলার কেন্দ্রে একটি সাদা বামন রয়েছে, যা আমাদের সূর্যের আকারের প্রায় ৬০%। এর পৃষ্ঠের তাপমাত্রা প্রায় ১২০,০০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস! কিন্তু এই সাদা বামনটি এখন তার সমস্ত শক্তি খরচ করে ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে। কয়েক বিলিয়ন বছরের মধ্যে এটি একটি কালো বামনে পরিণত হবে, যা আমাদের মহাবিশ্বের অন্ধকারে মিশে যাবে। ভাবুন তো, কীভাবে একটি নক্ষত্রের জীবন ও মৃত্যুর চক্র মহাবিশ্বের অবিরাম পরিবর্তনের অংশ।
জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ যখন রিং নেবুলার ভেতরের দিকে নজর দেয়, তখন একটি নতুন বিস্ময় ফুটে ওঠে—প্রায় ২০,০০০টি ছোট ছোট বলের মতো গঠন। এগুলোকে হাইড্রোজেন গ্যাস দিয়ে তৈরি বলে মনে করা হচ্ছে, যা আমাদের নেবুলার গঠন ও বিবর্তন সম্পর্কে নতুন তথ্য প্রদান করছে। রিং নেবুলা, যা M57 নামেও পরিচিত, আমাদের মহাবিশ্বের এক চিরন্তন গল্প।
Tags
বিজ্ঞান আলাপ