মহাকাশ থেকে মানুষের প্রথম জাম্প: ইতিহাস ও বিস্ময়কর কাহিনি

মহাবিশ্বকে জয় করার অভিযাত্রা শুধু রকেট বা নভোযানেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং আকাশের উচ্চতম সীমা থেকে সরাসরি পৃথিবীর বুকে ঝাঁপ দেওয়ার মধ্য দিয়েও মানব ইতিহাসে রচিত হয়েছে অনন্য সব অধ্যায়। মানুষের প্রথম মহাকাশ জাম্পের কাহিনি শুরু হয় ১৯৬০ সালে, যখন মার্কিন বিমানবাহিনীর সাহসী পাইলট ক্যাপ্টেন জোসেফ কিটিঞ্জার “প্রজেক্ট এক্সেলসিয়ার”-এর অংশ হিসেবে হিলিয়াম ভরা বিশাল বেলুনে চড়ে পৃথিবীর পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩১ কিলোমিটার বা ১,০২,৮০০ ফুট ওপরে পৌঁছান। সেখান থেকে তিনি ঝাঁপ দেন মৃত্যুকে উপেক্ষা করে। সেই সময় পৃথিবীর সর্বোচ্চ উচ্চতা থেকে মানবজাম্প হিসেবে এটি ছিল এক অসাধারণ রেকর্ড। যদিও এই উচ্চতা প্রকৃত মহাকাশের সীমার ভেতরে পড়ে না, তবুও তখনকার প্রযুক্তি, ঝুঁকি এবং মানুষের মানসিক শক্তির বিবেচনায় এটি এক ঐতিহাসিক কীর্তি।

প্রকৃত মহাকাশের সূচনা হয় কারম্যান রেখা থেকে, যা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের প্রায় ১০০ কিলোমিটার ওপরে। সেই সীমার কাছাকাছি পৌঁছে ঝাঁপ দেওয়ার দুঃসাহসিক কাজটি সম্পন্ন করেন অস্ট্রিয়ান স্কাইডাইভার ফেলিক্স বমগার্টনার। ২০১২ সালের ১৪ অক্টোবর তিনি “রেড বুল স্ট্রাটোস” মিশনের অংশ হিসেবে প্রায় ৩৯ কিলোমিটার বা ১,২৮,১০০ ফুট উচ্চতা থেকে ঝাঁপ দেন। এই জাম্পের মাধ্যমে তিনি শুধু ইতিহাসে নতুন অধ্যায় লেখেননি, বরং পতনের সময় শব্দের গতিও ভেঙে দেন, যা মানবদেহ দিয়ে প্রথমবারের মতো সম্ভব হয়েছিল। সারা বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ সরাসরি দেখেছিল সেই রোমাঞ্চকর দৃশ্য, যেখানে একজন মানুষ পৃথিবীর বুকে পতিত হচ্ছেন মহাশূন্যের অন্ধকার থেকে।

এই দুই ঘটনাই মানব অভিযাত্রার অসাধারণ দৃষ্টান্ত, যা প্রমাণ করে যে মানুষ শুধু মহাকাশে পৌঁছানোর জন্যই নয়, বরং তার সীমা অতিক্রম করে আবারও পৃথিবীতে ফিরে আসার ক্ষেত্রেও অসম্ভবকে সম্ভব করতে সক্ষম। জোসেফ কিটিঞ্জারের পথপ্রদর্শক সাহস এবং ফেলিক্স বমগার্টনারের আধুনিক প্রযুক্তির সমন্বিত সাফল্য—দুটোই মানব সভ্যতার ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

মন্তব্য

নবীনতর পূর্বতন

نموذج الاتصال