করলা (বিটার গার্ড বা Momordica charantia) আমাদের দেশে বহুল পরিচিত একটি সবজি। যদিও এর স্বাদ অনেকের কাছে তিক্ত ও অরুচিকর মনে হয়, তবে করলা আসলে এক অসাধারণ ভেষজ গুণসম্পন্ন খাদ্য। আয়ুর্বেদ, চীনা ও প্রাচীন চিকিৎসা পদ্ধতিতে করলার ব্যবহার হাজার বছরের পুরোনো। আজও এটি রক্ত পরিষ্কার, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ, হজম শক্তি বৃদ্ধি এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করার জন্য ব্যবহৃত হয়।
করলার পুষ্টিগুণ-
করলায় রয়েছে প্রচুর ভিটামিন, খনিজ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। বিশেষ করে—
ভিটামিন C: রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
ভিটামিন A ও বিটা-ক্যারোটিন: চোখের স্বাস্থ্য ও ত্বকের জন্য উপকারী।
আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম: রক্ত ও হাড়ের জন্য কার্যকর।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট: শরীরের কোষকে মুক্ত মৌল বা ফ্রি-র্যাডিকেল থেকে রক্ষা করে।
করলার স্বাস্থ্য উপকারিতা-
১. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক-
করলায় ইনসুলিনের মতো কাজ করে এমন বিশেষ যৌগ থাকে। এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে, এজন্য ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য করলা খুবই উপকারী।
২. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়-
ভিটামিন C সমৃদ্ধ করলা শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে, ফলে সংক্রমণ ও ভাইরাসজনিত রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
৩. হজম শক্তি বৃদ্ধি করে-
করলা হজমে সহায়তা করে এবং অন্ত্রের পরজীবী কৃমি দূর করতে সাহায্য করে।
৪. রক্ত পরিষ্কার ও ত্বকের যত্নে উপকারী-
করলার রস রক্ত পরিশোধন করে এবং ব্রণ, চর্মরোগ ও ত্বকের অ্যালার্জি কমাতে কার্যকর ভূমিকা রাখে।
৫. ওজন কমাতে সহায়ক-
করলা খুবই কম ক্যালোরি সম্পন্ন একটি সবজি। এতে ফাইবার থাকায় এটি দ্রুত ক্ষুধা মেটায় এবং অতিরিক্ত ক্যালোরি জমতে দেয় না।
৬. হৃদপিণ্ডের জন্য ভালো-
নিয়মিত করলা খেলে খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) কমাতে সাহায্য করে এবং হৃদপিণ্ডকে সুস্থ রাখে।
৭. ক্যান্সার প্রতিরোধে ভূমিকা-
করলার মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি রোধে ভূমিকা রাখতে পারে বলে গবেষণায় দেখা গেছে।
করলার ব্যবহার পদ্ধতি-
সবজি হিসেবে রান্না: তরকারি, ভাজি বা ডাল রান্নায়।
রস করে পান: সকালে খালি পেটে অল্প পরিমাণ করলার রস পান করা উপকারী।
আয়ুর্বেদিক ঔষধ: বিভিন্ন ভেষজ ওষুধে করলা ব্যবহার করা হয়।
সতর্কতা-
অতিরিক্ত করলা খেলে পেটে ব্যথা বা ডায়রিয়া হতে পারে।গর্ভবতী নারীদের করলা খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।।ডায়াবেটিস রোগীরা ইনসুলিন বা ওষুধ খেলে করলার ব্যবহার নিয়মিত করার আগে ডাক্তারের সাথে আলোচনা করা জরুরি।
তিক্ত স্বাদের কারণে অনেকেই করলা এড়িয়ে চলেন, কিন্তু এই সবজি প্রকৃতপক্ষে একটি প্রাকৃতিক ওষুধ। নিয়মিত ও পরিমিত করলা খাওয়া আমাদের শরীরকে সুস্থ, শক্তিশালী এবং রোগমুক্ত রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
Tags
স্বাস্থ্য আলাপ
