অসীম মহাশূন্যের মাঝে একটি নীল গোলক নিজের অক্ষে ঘুরছে—এটি আমাদের পৃথিবী। এর পৃষ্ঠে ছড়িয়ে আছে অসংখ্য নদী, সমুদ্র ও মহাসাগর। কিন্তু প্রশ্ন হলো, কেন এই বিপুল পানি মহাকাশে ছিটকে যায় না বা মাটির গভীরে হারিয়ে যায় না? রহস্য লুকিয়ে আছে এক অদৃশ্য অথচ অপরিসীম শক্তিতে—
মাধ্যাকর্ষণ। পৃথিবী যেন এক বিশাল চুম্বক, যা প্রতিটি জলের অণু, আমাদের শরীর, বাতাস, এমনকি চাঁদকেও নিজের কক্ষপথে বেঁধে রাখে। পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে দাঁড়ালে ‘নিচে’ বলতে বোঝানো হয় পৃথিবীর কেন্দ্রের দিকেই। পানির প্রতিটি ফোঁটা এই মাধ্যাকর্ষণের কারণে পৃষ্ঠে আটকে থাকে। আর মাটির নিচে হারিয়ে যাওয়া? পৃথিবীর ভূত্বক, ম্যান্টল এবং গলিত কেন্দ্র একটি প্রাকৃতিক দেয়াল তৈরি করে, যা পানিকে খুব গভীরে প্রবেশ করতে বাধা দেয়।
মহাশূন্যে কিন্তু ‘উপর’ বা ‘নিচ’ বলে কোনো ধারণা নেই—দিক নির্ভর করে আপনি কাকে বা কীকে লক্ষ্য করছেন তার ওপর। পৃথিবীর ক্ষেত্রেও ‘নিচ’ মানে হলো এর কেন্দ্রের দিক। যদি মাধ্যাকর্ষণ না থাকত, সমুদ্রের ঢেউ মুহূর্তেই মহাকাশে মিলিয়ে যেত এবং আমরা সবাই শূন্যে ভেসে বেড়াতাম, ঠিক যেমন মহাকাশচারীরা আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে ভাসেন। এমনকি পৃথিবীর ভর যদি কমে যেত, তবুও ধীরে ধীরে পানি মহাকাশে পালিয়ে যেত, রেখে যেত এক শূন্য, নিষ্প্রাণ গ্রহ। তাই মাধ্যাকর্ষণ—এই অদৃশ্য শক্তি—কোটি কোটি বছর ধরে পৃথিবীর পানি ধরে রেখেছে, আমাদের নীল গ্রহকে জীবনের জন্য উপযুক্ত করে তুলেছে। এটাই পৃথিবীর সৌন্দর্য ও জীবনের নীরব নায়ক।
Tags
বিজ্ঞান আলাপ