সুপার ভাইরাস – অদৃশ্য শত্রুর উত্থান

মানবসভ্যতার ইতিহাসে যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ, প্রাকৃতিক বিপর্যয়—সবকিছুকে হার মানিয়েছে এক অদৃশ্য শত্রু। সে হলো—ভাইরাস। আর সেই ভাইরাসের মধ্যেই লুকিয়ে আছে এক ভয়ংকর রূপ, যাকে বিজ্ঞানীরা বলেন—সুপার ভাইরাস

প্রায় সাড়ে তিন বিলিয়ন বছর আগে পৃথিবীতে প্রথম জীবনের উদ্ভব। এর কিছুদিন পরেই জন্ম নেয় ভাইরাস।
কোনো কোষ ছাড়াই বেঁচে থাকা এদের পক্ষে সম্ভব নয়, কিন্তু একবার দেহে প্রবেশ করলে—এরা আমাদের কোষ দখল করে নেয়, আমাদের জীবনীশক্তিকেই ব্যবহার করে নিজেদের অসীম বাহিনী গড়ে তোলে।

তাহলে কীভাবে একটি সাধারণ ভাইরাস হয়ে ওঠে "সুপার"?

প্রথমত, দ্রুত মিউটেশন—প্রতিনিয়ত রূপ বদলায়।
দ্বিতীয়ত, ড্রাগ-রেজিস্ট্যান্স—ওষুধকে নিষ্ক্রিয় করে দেয়।
তৃতীয়ত, ক্রস-স্পিসিজ জাম্প—প্রাণী থেকে মানুষে, মানুষ থেকে প্রাণীতে ছড়িয়ে পড়তে সক্ষম।

যেমন—নিপাহ ভাইরাস, যা বাদুড় থেকে মানুষের মধ্যে আসতে পারে, আর মৃত্যুহার ৭০% এর বেশি। ১৪শ শতকে ব্ল্যাক ডেথ ইউরোপের এক-তৃতীয়াংশ মানুষকে মুছে দিয়েছিল।

১৯১৮ সালের স্প্যানিশ ফ্লু প্রায় ৫ কোটিরও বেশি প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল। আর সাম্প্রতিক ইতিহাসে কোভিড-১৯ থামিয়ে দিয়েছিল গোটা পৃথিবীকে। প্রতিবারই দেখা গেছে, ভাইরাস কেবল শরীর নয়, সভ্যতারও পরীক্ষা নেয়।

বিজ্ঞানীরা ভাইরাস নিয়ে গবেষণা করেন, ভ্যাকসিন তৈরি করেন, কিন্তু একইসাথে ঝুঁকিও রয়েছে।
যদি কোনো উচ্চমাত্রার সংক্রামক ভাইরাস দুর্ঘটনাক্রমে বেরিয়ে আসে? অথবা—যদি কৃত্রিমভাবে তৈরি হয় এমন এক ভাইরাস, যা জীববৈজ্ঞানিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা যায়? সেই ভয়েই জন্ম নিয়েছে "সুপার ভাইরাস" নামের ধারণা।

আজ পৃথিবী আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি সংযুক্ত। এক শহর থেকে আরেক শহরে পৌঁছাতে সময় লাগে কয়েক ঘণ্টা। এর মানে—একটি নতুন সুপার ভাইরাস কয়েক দিনের মধ্যেই পুরো গ্রহে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

কিন্তু আমরা অসহায় নই। আধুনিক ভ্যাকসিন প্রযুক্তি, বিশেষ করে mRNA ভ্যাকসিন, দ্রুত নতুন রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সক্ষম। আন্তর্জাতিক নজরদারি ব্যবস্থা, যেখানে প্রতিটি ভাইরাসের গতিবিধি ট্র্যাক করা হয়। আর সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা—মানবজাতির সম্মিলিত জ্ঞান, বিজ্ঞান, ও সহযোগিতা।

ভাইরাস সবসময়ই থাকবে। তারা বিবর্তনের এক অদৃশ্য সৈনিক। কিন্তু প্রশ্ন হলো—আমরা কি প্রস্তুত? একদিন হয়তো সুপার ভাইরাস আবার আমাদের সামনে দাঁড়াবে।
তখন বিজ্ঞান, একতা, আর মানবিকতা—এই তিন অস্ত্রই নির্ধারণ করবে আমরা টিকে থাকবো, নাকি হারিয়ে যাবো ইতিহাসের অন্ধকারে।

ছবি: ক্যানভা প্রো

মন্তব্য

নবীনতর পূর্বতন

نموذج الاتصال