মহাবিশ্বের সাথে আমাদের মিলের গল্প

একবার ভাবে দেখুন, কোটি কোটি বছর আগে মহাবিশ্ব ছিল নিঃসীম অন্ধকার আর উত্তপ্ত গ্যাসের এক বিশাল সমুদ্র। তখনও কোনো নক্ষত্র ছিল না, কোনো গ্রহ ছিল না, এমনকি আমাদের পৃথিবীর অস্তিত্বও কল্পনার বাইরে। সেই শূন্যতা থেকে প্রথম আলো ছড়িয়ে পড়ল, জন্ম নিল নক্ষত্র। নক্ষত্রের ভেতরে আগুনের মতো জ্বলতে থাকা ভাটিখানায় তৈরি হতে শুরু করল মৌলিক উপাদান—কার্বন, অক্সিজেন, নাইট্রোজেন, লোহা। তারপর এক সময় সেই নক্ষত্রগুলো বিস্ফোরণে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল। তাদের ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে পড়ল মহাকাশে, ছড়িয়ে গেল ধুলো, গ্যাস আর অসংখ্য মৌলিক উপাদান। আর সেই ধুলো থেকেই একদিন জন্ম নিল আমাদের সৌরজগত, পৃথিবী আর তার বুকে আমরা।

এখন ভাবুন, আমাদের শরীরের ভেতর যে লোহা আছে, সেটা কোনো এক মৃত নক্ষত্রের ভেতর তৈরি হয়েছিল। আমাদের রক্তে যে অক্সিজেন ভেসে বেড়াচ্ছে, সেটাও কোনো এক প্রাচীন তারার ভেতরে জন্ম নিয়েছিল। আমরা যখন শ্বাস নেই, যখন হাসি বা কাঁদি, তখন আসলে মহাবিশ্বেরই ইতিহাস আমাদের ভেতর দিয়ে বয়ে চলে।

আরও আশ্চর্যের বিষয় হলো, মহাবিশ্ব যেমন মাধ্যাকর্ষণের বাঁধনে একত্রে রয়েছে, তেমনি আমাদের শরীরও অণু আর পরমাণুর অদৃশ্য শক্তির বাঁধনে দাঁড়িয়ে আছে। মহাবিশ্ব যেমন ক্রমাগত বদলাচ্ছে—কোথাও নতুন নক্ষত্র জন্ম নিচ্ছে, কোথাও পুরোনো নক্ষত্র নিভে যাচ্ছে—আমাদের জীবনও ঠিক তেমনি জন্ম, বৃদ্ধি আর মৃত্যুর এক নিরবচ্ছিন্ন চক্রে ঘুরে চলেছে।

অর্থাৎ, আমরা আলাদা কিছু নই। আমরা এই মহাবিশ্বেরই ক্ষুদ্রতম জগতের বাসিন্দা। আমাদের অস্তিত্ব যেন এক বিস্ময়কর আয়না, যেখানে মহাবিশ্ব নিজেকে দেখছে, নিজেকে জানছে। তাই তো বিজ্ঞানীরা বলেন— আমরা সবাই আসলে নক্ষত্রের অংশ, স্টারডাস্ট (stardust)

মন্তব্য

নবীনতর পূর্বতন

نموذج الاتصال