আকাশে আসছে মহাজাগতিক দৈত্য: ২০২৯ সালে পৃথিবীর কাছে Apophis

২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, দীপ্তদেশ – আগামী ২০২৯ সালের ১৩ এপ্রিল রাতে পৃথিবীর আকাশে এক অভূতপূর্ব মহাজাগতিক ঘটনার সাক্ষী হতে চলেছে বিশ্ব। প্রায় ৩৪০ মিটার আকারের গ্রহাণু 99942 Apophis, যা Eiffel টাওয়ারের সমান, পৃথিবীর এত কাছ দিয়ে অতিক্রম করবে যে এটি খালি চোখে দৃশ্যমান হবে। এই গ্রহাণু পৃথিবী থেকে মাত্র ৩১,৬০০ কিলোমিটার দূরে থাকবে—অর্থাৎ আমাদের কৃত্রিম উপগ্রহগুলোর চেয়েও নিচে। বিশ্বের প্রায় ২০০ কোটি মানুষ এই ফ্যাকাশে আলোর বিন্দুকে আকাশে একটি অচেনা তারার মতো দেখতে পাবেন।

একটি সম্ভাব্য হুমকির আবিষ্কার

২০০৪ সালে প্রথম আবিষ্কৃত এই গ্রহাণু বিজ্ঞানীদের মনে আতঙ্ক ছড়িয়েছিল। প্রাথমিক হিসাবে দেখা গিয়েছিল, ২০২৯ সালে এটির পৃথিবীর সঙ্গে সংঘর্ষের সম্ভাবনা ছিল ২.৭%। এমন একটি সংঘর্ষ ঘটলে এটি ১০০০ মেগাটনেরও বেশি শক্তি মুক্ত করত, যা মানুষের তৈরি সবচেয়ে শক্তিশালী পারমাণবিক বোমার হাজার গুণ শক্তিশালী। এর ফলে একটি বিশাল অঞ্চল ধ্বংস হতো, ধূলা ও ধ্বংসাবশেষে আকাশ ঢেকে যেত, এবং সাময়িক জলবায়ু পরিবর্তন ঘটত।

কিন্তু বছরের পর বছর পর্যবেক্ষণ ও রাডার বিশ্লেষণের মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত করেছেন, আগামী একশো বছরে Apophis পৃথিবীর সঙ্গে সংঘর্ষ করবে না। তবে এত কাছ দিয়ে অতিক্রমের সময় পৃথিবীর মহাকর্ষ এর কক্ষপথ ও ঘূর্ণনকে প্রভাবিত করতে পারে। এটি বর্তমানে Aten শ্রেণির গ্রহাণু হলেও অতিক্রমের পর Apollo শ্রেণিতে রূপান্তরিত হতে পারে। এমনকি এর পৃষ্ঠে ভূকম্পন ও ছোটখাটো উল্কাবৃষ্টির সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

এই বিরল সুযোগ কাজে লাগাতে মহাকাশ সংস্থাগুলো তৎপর। NASA তাদের OSIRIS-REx মহাকাশযানকে নতুন করে সাজাচ্ছে Apophis–এর কাছে পাঠানোর জন্য। ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা RAMSES নামে একটি মিশন পরিকল্পনা করছে, যা এর গঠন ও কক্ষপথের পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ করবে। এমনকি কিউবস্যাট নামিয়ে এর ভেতরের ভূকম্পনের শব্দ শোনার পরিকল্পনাও রয়েছে।

যদিও ২০২৯ সালে সংঘর্ষের আশঙ্কা নেই, বিজ্ঞানীরা সতর্ক করছেন যে পৃথিবীর মহাকর্ষের প্রভাবে Apophis–এর কক্ষপথ বদলে গেলে ২০৬৮ সালে এটি আবারো হুমকি হয়ে উঠতে পারে। তাই এটি কেবল একটি মহাজাগতিক অতিথি নয়, বরং একটি চলমান রহস্য, যার গতিবিধি বিজ্ঞানীদের নজরে রাখতে হবে।

২০২৯ সালের সেই রাতে Apophis–এর আগমন হবে একটি মহাজাগতিক নাটকের অংশ। এটি আমাদের মনে করিয়ে দেবে মহাবিশ্বের বিশালতা ও রহস্যময়তা। এই গ্রহাণু আমাদের কাছে একটি আয়নার মতো, যেখানে আমরা মানুষের ক্ষুদ্রতা ও কৌতূহলী মনোভাব একসঙ্গে দেখতে পাব।

আপনি কি প্রস্তুত এই বিস্ময়কর ঘটনার সাক্ষী হতে?

মন্তব্য

নবীনতর পূর্বতন

نموذج الاتصال