(লিখেছেন: সিরাজুর রহমান) আমাদের সূর্য তার সম্পূর্ণ সোলার সিস্টেম নিয়ে বর্তমানে ‘আকাশগঙ্গা’ ছায়াপথ বা মিল্কওয়ে গ্যালাক্সির কেন্দ্র থেকে প্রায় ২৬.৫-২৮ হাজার আলোকবর্ষ (৮.৫ কিলোপারসেক) দূরত্বে অবস্থান করছে। জ্যোতির্বিজ্ঞানের হিসেবে, ১ পারসেক = ৩.২৬ আলোকবর্ষ এবং ১ কিলোপারসেক = ১,০০০ পারসেক।
আমাদের আকাশগঙ্গা ছায়াপথে আনুমানিক ১০০ থেকে ৪০০ বিলিয়ন নক্ষত্র রয়েছে এবং এখানে গ্রহের সংখ্যা হতে পারে আনুমানিক এক ট্রিলিয়নেরও বেশি। পৃথিবীসহ সৌরজগতকে নিয়ে সূর্য প্রতি সেকেন্ডে গড়ে ২২০ থেকে ২৪০ কিলোমিটার বেগে গ্যালাক্সির কেন্দ্র প্রদক্ষিণ করছে।
প্রায় ১ লক্ষ আলোকবর্ষ ব্যাসবিশিষ্ট এই আকাশগঙ্গা ছায়াপথে সূর্যের একটি পূর্ণ কক্ষপথ সম্পন্ন করতে সময় লাগতে পারে আনুমানিক ২২ থেকে ২৫ কোটি বছর। জ্যোতির্বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলা হয় এক গ্যালাক্টিক ইয়ার (Galactic Year)।
আবার আলোর গতি প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৩ লক্ষ কিলোমিটার। এই গতিতে এক বছরে আলোর অতিক্রান্ত দূরত্বকে বলা হয় আলোকবর্ষ। যা প্রায় ৯.৪৬ ট্রিলিয়ন কিলোমিটার সমান হিসেবে ধরা হয়। সেই হিসেবে আমাদের সোলার সিস্টেমের পার্শ্ববর্তী সোলার সিস্টেম প্রক্সিমা সেন্টুরি প্রায় ৪.২৪ আলোকবর্ষ দূরত্বে অবস্থান করছে।
সেখানে পৌঁছাতে মানবজাতির তৈরি সবচেয়ে দ্রুত গতির (প্রতি সেকেন্ডে ১৯২ কিলোমিটার) পার্কার সোলার প্রোব স্পেসক্রাফটের আনুমানিক ৭০ হাজারের অধিক বছর লেগে যেতে পারে। অন্যদিকে গত ২০১২ সালে ভয়েজার-১ স্পেস-প্রোবটি ইন্টারস্টেলার স্পেস (আন্তঃনাক্ষত্রিক মহাশূন্য)-এ প্রবেশ করেছে বলে ঘোষণা দেয় নাসা।
তাছাড়া, মানব জাতির প্রেরিত প্রথম আন্তঃনাক্ষত্রিক অবজেক্ট ভয়েজার-১ স্পেসক্রাফট বিগত ৪৮ বছর ধরে ছুটে চলেছে এই অসীম মহাশূন্যে। এর গতি প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ১৭ কিলোমিটার এবং এত দীর্ঘ সময়ে এটি কিনা মাত্র এক আলোক-দিন (Light day) সমান দূরত্ব, অর্থাৎ প্রায় ২৫ বিলিয়ন কিলোমিটার পথ অতিক্রম করেছে। আমাদের কাছে এই দূরত্ব অতি বিশাল মনে হলেও, মহাজাগতিক দূরত্বের বিচারে এটি আসলে একেবারেই অতি ক্ষুদ্র একটি অংশ হবে।
বিজ্ঞানীদের মতে, এই মহাবিশ্বের মোট আকার আনুমানিক ৯৩ বিলিয়ন আলোকবর্ষ পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে। এখানে থাকতে পারে কয়েকশো বিলিয়ন ছায়াপথ এবং কয়েকশো ট্রিলিয়ন নীহারিকা (নেবুলা), যেগুলোকে বলা হয় নতুন নক্ষত্র জন্মের কারখানা।
প্রতিটি ছায়াপথেই রয়েছে অসংখ্য ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণ-গহ্বর। এরা আশেপাশের নক্ষত্র ও অন্যান্য মহাজাগতিক বস্তু নিজেদের ভেতরে গ্রাস করে নেয় বা টেনে নেয়। কৃষ্ণগহ্বরের মহাকর্ষ এতটাই শক্তিশালী যে এর ভেতর থেকে এক বিন্দু আলোও বের হতে পারে না।
পরিশেষে বলা যায়, এই সুবিশাল মহাবিশ্বে আমাদের অস্তিত্ব আসলে একটুখানি ধূলিকণার মতো মনে হতে পারে। তবুও এই ছোট্ট পৃথিবী থেকেই মানবজাতি তার ধারাবাহিক গবেষণা, বিজ্ঞান চর্চা ও অনুসন্ধানের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত উন্মোচিত হচ্ছে মহাবিশ্বের অজানা রহস্য। তাই মহাবিশ্ব আমাদের বিনয়ী হতে শেখায় এবং মনে করিয়ে দেয়, সৃষ্টিকর্তার অসীম শক্তির সামনে আমাদের জ্ঞান ও ক্ষমতা ঠিক কতটাই নগণ্য।
