ডিএনএ বা ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড শুধু আমাদের জীবনের নকশাই বহন করে না, বরং আধুনিক বিজ্ঞানের দুনিয়ায় এটি এখন বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী তথ্য সংরক্ষণের মাধ্যম হয়ে উঠছে। একেবারে অবিশ্বাস্য ব্যাপার হলো, মাত্র ১ গ্রাম ডিএনএ-তে আপনি প্রায় ২১৫ পেটাবাইট তথ্য জমা রাখতে পারবেন। সহজ করে বললে, সেটা ২১ কোটি ৫০ লাখ গিগাবাইটের সমান! আমাদের সাধারণ হার্ডড্রাইভ, চুম্বকীয় টেপ বা ক্লাউড সার্ভারের তুলনায় এটা কতগুণ বেশি, ভাবতেই অবাক লাগে না?
বিজ্ঞানীরা বলছেন, ডিজিটাল যুগে প্রতিদিন এত বেশি তথ্য তৈরি হচ্ছে যে প্রচলিত প্রযুক্তি দিয়ে সেগুলো সংরক্ষণ করা ক্রমেই কঠিন হয়ে পড়ছে। এই সমস্যার সমাধান হতে পারে প্রকৃতিরই তৈরি করা ডিএনএ।
২০১২ সালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা একটা যুগান্তকারী পরীক্ষা করেছিলেন। তারা এক হাজারেরও বেশি পৃষ্ঠার একটা বই, সঙ্গে ছবি এবং কম্পিউটার প্রোগ্রাম—সবকিছুই ডিএনএ-তে সংরক্ষণ করতে পেরেছিলেন। আরো মজার ব্যাপার হলো, পরে তারা ডিএনএ থেকে সেই বইটি পুরোপুরি ঠিকঠাক পুনরুদ্ধারও করতে পেরেছিলেন।
মাইক্রোসফট এবং ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের গবেষকরাও একসাথে কাজ করে ডিএনএ ডেটা স্টোরেজে বড় সাফল্য পেয়েছেন। তারা কৃত্রিম ডিএনএ ব্যবহার করে গান, ভিডিও, এমনকি পুরো একটা ডেটাবেস সংরক্ষণ করেছেন এবং পরে সেগুলো ঠিকঠাক পেয়েও গেছেন। এই পরীক্ষাগুলো প্রমাণ করে যে ডিএনএ শুধু তাত্ত্বিক কথা নয়, বরং ভবিষ্যতে এটা কাজে লাগানোর মতো একটা প্রযুক্তি হয়ে উঠতে পারে।
ডিএনএ সংরক্ষণের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এর স্থায়িত্ব। এটি স্বাভাবিকভাবেই হাজার বছর পর্যন্ত অক্ষত থাকতে পারে। সঠিক পরিবেশ পেলে এটা নষ্টই হয় না। তাই মানবসভ্যতার সাংস্কৃতিক, বৈজ্ঞানিক এবং ঐতিহাসিক সম্পদ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সংরক্ষণে ডিএনএ হতে পারে এক অনন্য সমাধান।
তবে কিছু চ্যালেঞ্জও আছে। এখন ডিএনএ-তে তথ্য লিখতে এবং পড়তে যে প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়, তার খরচ অনেক বেশি এবং সময়ও বেশি লাগে। গবেষকরা বলছেন, যদি এই প্রযুক্তি আরো দ্রুত, সস্তা এবং সহজলভ্য হয়, তবে আগামী কয়েক দশকের মধ্যেই ডিএনএ-ভিত্তিক ডেটা স্টোরেজ আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে উঠতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের ধারণা, যে হারে তথ্য তৈরি হচ্ছে, ২০৫০ সালের মধ্যে পৃথিবীর সব তথ্য সংরক্ষণের জন্য বর্তমান প্রযুক্তি যথেষ্ট হবে না। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, মাত্র ১ কেজি ডিএনএ দিয়েই মানব ইতিহাসের সব তথ্য ধারণ করা সম্ভব! ফলে ডিএনএ এখন শুধু জীবনের নকশাই নয়, মানবজাতির জ্ঞানভাণ্ডারের নিরাপদ ভবিষ্যৎ হিসেবেও আলোচনার কেন্দ্রে।
Tags
প্রযুক্তি আলাপ