প্রতিকী ছবি, Canva Pro
গাজা, ৮ অক্টোবর ২০২৫: দীপ্তদেশ পত্রিকার এই ধারাবাহিক প্রতিবেদনের দ্বিতীয় পর্বে আমরা গাজার শিশুদের দুর্দশার আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া এবং সম্ভাব্য সমাধানের পথ নিয়ে আলোচনা করব। গত দুই বছরের যুদ্ধে গাজায় ৬৭,০০০-এরও বেশি প্যালেস্টাইনীয় নিহত হয়েছে, যার মধ্যে প্রায় অর্ধেক মহিলা ও শিশু—অর্থাৎ ২০,০০০-এরও বেশি শিশু মৃত্যুর শিকার। এই সংকট শুধু স্থানীয় নয়; এটি বিশ্বব্যাপী মানবতার পরীক্ষা। ইউনিসেফের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৭০০ দিনেরও বেশি সময় ধরে গাজার শিশুরা হত্যা, অঙ্গহীনতা এবং বাস্তুহারার শিকার হয়েছে, যা একটি সম্পূর্ণ প্রজন্মকে ধ্বংস করছে।দুই বছর পূর্ণ হওয়ার সাথে সাথে বিশ্ব নেতারা এই সংকটের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করলেও, বাস্তবিক পদক্ষেপের অভাবে এটি একটি 'শব্দের খেলা' হয়ে দাঁড়িয়েছে। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ৭ অক্টোবর ২০২৫-এর স্মৃতিদিনে এক বিবৃতিতে বলেন, গাজা 'মানবতার কলঙ্ক' হয়ে উঠেছে, যেখানে ২৩ মাসে ২০,০০০ শিশু নিহত হয়েছে—প্রতি ঘণ্টায় একজন। সেভ দ্য চিলড্রেনের প্রতিবেদন অনুসারে, এই হারটি অভূতপূর্ব, যা ইসরাইলি বাহিনীর হামলার ফল।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মতো শক্তিশালী দেশগুলো যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়েছে, কিন্তু অস্ত্র সরবরাহ চালিয়ে যাওয়ায় তাদের অবস্থান দ্বৈততা দেখায়। এক্স-এ (পূর্বের টুইটার) সাম্প্রতিক পোস্টগুলোতে দেখা যায়, বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদকারীরা ৬৭,০০০-এরও বেশি মৃত্যুর মধ্যে ২০,০০০ শিশুর কথা তুলে ধরছেন, এবং ইসরাইলকে 'জেনোসাইড' এর অভিযোগে অভিযুক্ত করছেন। উদাহরণস্বরূপ, একটি পোস্টে উল্লেখ করা হয়েছে, গাজায় ৪০,০০০ শিশু এক বা উভয় অভিভাবক হারিয়েছে, এবং শিশু অ্যামপুটির হার বিশ্বের যেকোনো স্থানের চেয়ে বেশি।
মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) ইসরাইলী নেতাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে, কিন্তু বাস্তবায়নের অভাবে এটি কাগজের টাইগার হয়ে আছে। ডব্লিউএইচও-এর ২২ আগস্ট ২০২৫-এর প্রতিবেদনে দুর্ভিক্ষের নিশ্চয়তা ঘোষণা করা হয়েছে, যাতে ৫ লক্ষেরও বেশি মানুষ ক্ষুধায় ভুগছে, এবং শিশুদের মধ্যে তীব্র অপুষ্টির হার জুলাই থেকে বেড়েছে। ইউনিসেফের সাম্প্রতিক স্ক্রিনিংয়ে দেখা গেছে, গাজা সিটিতে ৫টির ১টি শিশু তীব্র অপুষ্টিতে আক্রান্ত।
গাজার শিশুদের বাঁচানোর জন্য তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি এবং অবাধ সাহায্য প্রবেশ অপরিহার্য। সেভ দ্য চিলড্রেনের অনুমান অনুসারে, ১৩২,০০০ শিশু (৫ বছরের নিচে) তীব্র অপুষ্টির ঝুঁকিতে রয়েছে, যা দুর্ভিক্ষের ফলে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছে। আইপিসি (ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন) রিপোর্টে বলা হয়েছে, ১৫ আগস্ট ২০২৫ পর্যন্ত গাজা গভর্নরেটে দুর্ভিক্ষ নিশ্চিত হয়েছে, যা সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ অন্যান্য অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়বে।
দীর্ঘমেয়াদী সমাধানে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার পুনর্নির্মাণ জরুরি। ইউএনআরডব্লিউএর সাম্প্রতিক সিচুয়েশন রিপোর্টে (২৫ সেপ্টেম্বর-১ অক্টোবর ২০২৫) উল্লেখ করা হয়েছে, যুদ্ধের ৭১৭-৭২৩ দিনে ৭৪৫,০০০ শিশু ও ছাত্রছাত্রী শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এক্স-এর পোস্টগুলোতে দেখা যায়, ৪৩৬,০০০ বাড়ি, ৬৫৪ হাসপাতাল এবং ৫১৮ স্কুল ধ্বংস হয়েছে, যা পুনর্নির্মাণের জন্য বিশাল তহবিল দাবি করে। বিশ্ব নেতাদের কাছে আহ্বান: অবিলম্বে সাহায্য বাড়ান, যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করুন এবং দায়ীদের বিচার করুন।
সম্পাদকীয় নোট, দীপ্তদেশ: এই প্রতিবেদনটি সাম্প্রতিক আন্তর্জাতিক সূত্র এবং সোশ্যাল মিডিয়া আপডেটের উপর ভিত্তি করে তৈরি। নোটস (ফুটনোট) হিসেবে সাইটেড সূত্রগুলো দেখুন। হ্যাঁ, এই স্টাইলে কন্টিনিউ করা যাবে—পরবর্তী পর্বে আমরা ব্যক্তিগত গল্প বা পুনর্নির্মাণের চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করব। আরও আপডেট চাইলে জানান!
